হাক্কানী দরুদ শরীফের ব্যাখ্যা, তাৎপর্য ও বিশ্লেষণ
হাক্কানী দরুদ শরীফের শব্দগুলো কোরআন ও হাদীসে কোন কোন জায়গায় উল্লেখ আছে তাহা
নিম্নরুপ ঃ ব্যাখা ঃ আল্লাহুমা শব্দটি আল কোরআনে সূরা মায়িদার ১১৪নং আয়াতে, সূরা
ইউনুসের ১০নং আয়াতে, সূরা যুমারের ৪৬নং আয়াতে, সূরা আল ইমরানের ২৬নং আয়াতে উল্লেখ
আছে, এবং আলাহুমা শব্দটি দরুদে ইব্রাহীমের শুরুতে উল্লেখ আছে, ( মিশকাত শরীফ ১ম
খন্ড ৮৬ পৃষ্ঠা, সূনানে নাসায়ী শরীফ ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠা) ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ। সাল্লি ও সাল্লিম ঃ- আল কোরআনে সূরা আহযাবের ৫৬নং আয়াতে উল্লেখ আছে,
সাল্লি ও সাল্লিম আর হাক্কানী দরুদ শরীফের শুরুতে সাল্লি ও সাল্লিম শব্দ উল্লেখ
আছে, যাহা কোরআনের আয়াতের সাথে মিল পাওয়া যায় এবং নুজহাতুল মাজালেস গ্রন্থে মৃত্যুর
যন্ত্রণা থেকে মুক্তির দরুদ শরীফের এই শব্দগুলো উল্লেখ আছে ( শাইখুল হাদীস হযরত
মাওলানা জাকারিয়া (রহঃ) লিখিত দরুদ শরীফের মাহাত্ম্য ১৩৫ পৃষ্ঠা ) এবং আল্লাহুমা
সাল্লি ও সাল্লিম এ শব্দগুলো মোহাম্মদ ইবনে সূলাইমান আল জুজলী (রহঃ) লিখিত
দালায়েলুর খায়রাত কিতাবে ৩১ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে। আল্লাহুমা সাল্লি ও সাল্লিম এর অর্থ
-- হে আল্লাহ তোমার রহমত শান্তি অবতীর্ণ কর। ❇️ অ বারিক আলা আবদিকার রাসুলিল কারীম
ঃ- হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাজিঃ) নবী করীম ( সাঃ) এর জন্য দোয়া করতেন, হে আল্লাহ!
তোমার দয়ালু সম্মানিত রাসূল এর উপর তোমার রহমত বৃদ্ধি করে দাও, যিনি তোমার সম্মানিত
দয়ালু বান্দা ও সম্মানিত রাসূল। ( সহীহ ইবনে হিব্বান ৩য় খন্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা।) ❇️ অ
বারিক আলা আবদিকার রাসুলিল কারীম এর অর্থ -- তোমার দয়ালু বান্দা, দয়ালু রাসূল (
সাঃ) এর উপর বরকত অবতীর্ণ করুন। আবদিকার রাসুলিল কারীম শব্দগুলো বুখারী শরীফ এর ৯ম
খন্ড ৫৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, এই শব্দগুলো দরুদে ফতুহাতে উল্লেখ আছে ( নিয়ামুল
কোরআন ১০১ পৃষ্ঠা) এবং সাদকার বিকল্প দরুদের মধ্যে আবদিকার রাসুলিল কারীম শব্দ
উল্লেখ আছে। ( দরুদের মাহাত্ন ৪০ পৃষ্ঠা) এবং আবদিকার রাসুলিল কারীম শব্দগুলো
সূনানে ইবনে মাজাহ ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে। ❇️ রাহমাতাললিল আলামীন -এর অর্থ
ঃ--যিনি সর্ব জগতের করুনার নির্ঝর। সূরা আম্বিয়া ১০৭নং আয়াতে উল্লেখ আছে, অমা
আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাললিল আলামীন অর্থাৎ, হে নবী আপনাকে আমি সারা বিশ্বের জন্য
রহমত স্বরুপ পাঠাইয়াছি । ❇️ রাহমাতাললিল আলামীনের ব্যাখ্যা ঃ-- আলম শব্দের বহুবচন
হলো আলামীন । মানব, জ্বিন, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, জড় পদার্থসমূহ সবই এর অন্তর্ভুক্ত
রাসূল (সাঃ) সার্বজনীন রহমত স্বরুপ ছিলেন। রাসূল(সাঃ) এর আগমন মানব জাতির জন্য
আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। হাদীসঃ-- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে
প্রেরিত রহমত। ( মুস্তাদরাকে হাকিম ১ম খন্ড ৯১ পৃষ্ঠা, সূনানে দারামী হাদীস নং-১৫)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয়নি, আমাকে বিশ্ব বাসীর জন্য
রহমত হিসাবে পাঠানো হয়েছে । ( মুসলিম শরীফ হাদীস নং-১৫৯৯) ❇️ শাফীঈল মুয্নিবীন
অর্থঃ-- গোনাহগারদের সুপারিশকারী। গোনাহগারদের শাফায়াতকারী নবী করীম (সাঃ), সূরা
বনী ইসরাঈলের ৭৯নং আয়াতে উল্লেখ আছে, মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থান, হযরত আবু
সাঈদ খুদরী (রাজিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল মাকামে
মাহমুদ কি জিনিস ? নবী করীম (সাঃ) বললেন- সেটি হল সে স্থান যেখান থেকে আমি আমার
গোনাহগার উম্মতের জন্য শাফায়াত করব। ( বুখারী শরীফ হাদীস নং-৪৭১৮,তিরমিযী শরিফ
হাদিস নং-৩১৪৮,মুসনাদে আহমদ ২য় খন্ড ৪২১ পৃষ্ঠা) ❇️ হাদীসঃ- হযরত কাব ইবনে ওজরা
(রাজিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত -শাফীঈল মূয্নিবীন গোনাহগারদের শাফায়াতকারী নবী করীম
(সাঃ) বলেন, আমার শাফায়াত কেয়ামতের দিন আমার ঐ সকল উম্মতের জন্য যারা কবিরা
গুনাহগার এবং যাদের কে গুনাহ ধ্বংস করে দিয়েছে। (আবু দাউদ শরীফ হাদীস
নং-৭৪৩৯,তারীখে বাগদাদ হাদীস নং-৪১৭,মুজামে আওসাত হাদীস নং-৫৩৬০ ) এবং দরুদে তাজে
হযরত মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান সাজলী (রহঃ) শাফীঈল মুয্নিবীন শব্দ উল্লেখ করেছেন,
নবী-করীম (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার অনুমতি নিয়ে গোনাহগারদেরকে সুপারিশ করবেন, ( সূরা
বাকারা ২৫৫ নং আয়াত) ❇️ হাদীসঃ- হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাজিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত,
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ৩ শ্রেণীর লোক কেয়ামতের দিন সুপারিশ করিবেন (১)- নবীগণ ,(২)
- হাক্কানী উলামায়ে কিরাম ও আউলিয়া কিরামগণ, (৩) - শহীদগণ। নবী-করীম (সাঃ) এবং
নেককার সালেহীন আউলিয়াগণ সুপারিশ করতে পারবেন। ( মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ৪৯৫ পৃষ্ঠা
বেহেশতী যেওর ৭ম খন্ড ৬৪৮ পৃষ্ঠা) ❇️ সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা ওয়া নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদিও অর্থঃ- আমাদের অধিনায়ক, আমাদের নেতা এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ।
মুহাম্মদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত, এই শব্দগুলী হল নবী করীম (সাঃ) এর টাইটেল বা উপাধি।
❇️ মুহাম্মদ (সাঃ) নামের ব্যাখ্যাঃ- রাসূল (সাঃ) এর মুবারক নাম মুহাম্মদ, মুহাম্মদ
শব্দের উৎপত্তি তাহমীদ শব্দ মূল থেকে হয়েছে। মুহাম্মদ শব্দটি ইসমে মাফউল বা
কর্মবাচক বিশেষ্য। মুহাম্মদ শব্দের অর্থ - প্রশংসিত, অর্থাৎ তিনি বারবার প্রশংসা
পাওয়ার যোগ্য এবং প্রশংসাকারীরা ও বারবার তার প্রশংসা করে। মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশেষ
নবী ও নবীকুল শিরোমণি। তার পূর্বে কাহারো নাম মুহাম্মদ রাখা হয়নি। আল্লাহর
পছন্দনীয় ও সু - সংরক্ষিত একটি পবিত্র নাম। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আহমাদ নামে তাকে
একবার উল্লেখ করা হয়েছে। ( সূরা ছফ আয়াত-৬ ) আর মুহাম্মদ নামে তাকে ৪ বার উল্লেখ
করা হয়েছে, (১) সূরা আহযাব আয়াত-৪০, (২)সূরা আল ইমরান আয়াত -১৪৪,(৩) সূরা মুহাম্মদ
আয়াত-২, (৪) সূরা আল ফাত্হ আয়াত-২৯।ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ❇️ মাওলানা
ব্যাখ্যাঃ- মাওলা একটি আরবী শব্দ, এই শব্দটি দুইটি অংশে গঠিত একটি হল মাওলা অপরটি
হল না, মাওলার দুইটি অর্থঃ-(১) মালিক, (২) বন্ধু। এবং না আরবী শব্দ অর্থাৎ আমাদের,
সুতরাং মাওলানা অর্থ -- আমাদের মালিক ও আমাদের বন্ধু (সরদার)। সুতরাং মাওলা শব্দের
অর্থ যখন মালিকের দিকে হবে তখন তা আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হবে আর যখন বন্ধু
বা সরদার এর দিকে উদ্দেশ্যে ( নিসবত) হবে তখন পরম সম্মানিত উলামায়ে কেরামের
উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে এবং নবী করীম (সাঃ) এর জন্য প্রযোজ্য হবে ( সূরা তাহরীম
আয়াত-৪) এবং সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা ওয়া নাবিয়্যিনা মোহাম্মাদিও এই শব্দগুলো দরুদে
খায়ের এর মধ্যে উল্লেখ আছে (নিয়ামুল কোরআন ১০১ পৃষ্ঠা) এবং শব্দগুলো দালায়েলুর
খায়রাত কিতাবে ৫৩ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ❇️ ওয়া আলা আলিহী
অর্থঃ- এবং তার বংশধর, এবং ওয়া আলা আলিহী এই শব্দগুলি দরুদে ইব্রাহীমের মধ্যে
উল্লেখ আছে, ( কিতাবুস সালাত আবু দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ৬১ পৃষ্ঠা। ❇️ ওয়া আহলি বাইতিহী
ওয়া আওলাদিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী ওয়া আজওয়াজিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আওলীয়াহী ওয়া
উম্মাতিহী আজমাঈন অর্থঃ- তার আহলে বায়াত অর্থাৎ নবী করীম (সাঃ) এর পরিবারের
সদস্যবর্গ, সূরা আহযাবের ৩৩ আয়াতে আহলে বায়াত শব্দ উল্লেখ আছে। ❇️ আহলে বায়াতের
ব্যাখ্যা ঃ- হযরত ইবনে আব্বাস (রাজি) বলেন, আহলে বায়াত (গৃহবাসী) দ্বারা মহানবী
(সাঃ) এর পত্নীগণকে বুঝানো হয়েছে। ( তাফসীরে মাযহারী ১ম খন্ড ৩২ পৃষ্ঠা) হযরত
ওয়াসিলা ইবনে আসকা (রাজিঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) এই আয়াত পাঠ করে বললেন হযরত আলী
(রাজিঃ), হযরত ফাতেমা (রাজিঃ), হযরত হাসান (রাজিঃ), হযরত হুসাইন (রাজিঃ) এরা আমার
আহলে বায়াত। ( তাদেরকে ফার্সীতে পাক পাঞ্জতন বলা হয় ) তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড ৩৩
পৃষ্ঠা ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এবং সূরা হুদের ৭৩ নং আয়াতে আহলে বায়াতের কথা উল্লেখ
আছে। এবং আহলে বায়াত এর মাধ্যমে দরুদ শরীফ পড়ার জন্য আবু দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ৬৩
পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে। ❇️ ওয়া আওলাদিহী অর্থঃ- এবং তার সন্তান সন্ততিগণ, ওয়া
জুররিয়্যাতিহী অর্থঃ- তার আত্মীয় -স্বজন এবং আজওয়াজিহী আর সহধর্মিণীগণ ওয়া
আসহাবিহী অর্থঃ- তার সাহাবী সঙ্গীগণ, ওয়া আওলিয়াইহী অর্থঃ- তার বন্ধু-বান্ধবগণ, ওয়া
উম্মাতিহী আজমাঈন অর্থঃ- সমস্ত উম্মতগণের উপর। আজওয়াজিহী এবং জুররিয়্যাতিহী
শব্দগুলি আবু দাউদ শরীফ ৯৭৯ নং হাদিসে, হযরত আবু হুমাইদ সাইদী (রাজিঃ) থেকে বর্ণিত
হাদীসে শব্দগুলো উল্লেখ আছে, (আবু দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ৬২ পৃষ্ঠা) এবং আজওয়াজিহী ও
জুররিয়্যাতিহী শব্দগুলো মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২১৬ পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এবং আজওয়াজিহী দ্বারা নবী করীম (সাঃ) এর সহধর্মিণীগণকে বুঝানো
হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) এর পূন্যময়ী স্ত্রীগণের নাম যথাঃ- (১)হযরত খাদিজা বিনতে
খুয়াইলিদ(রাজিঃ ),(২ )হযরত সাওদা বিনতে যামআ (রাজিঃ), (৩)হযরত আয়েশা সিদ্দিকা
(রাজিঃ), (৪) হযরত হাফসা বিনতে উমর (রাজি), (৫) হযরত যয়নব বিনতে খোযায়মা (রাজিঃ),
(৬) হযরত উম্মে সালমা (রাজিঃ), (৭) হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ (রাজিঃ), (৮) হযরত
যুয়াবিয়া (রাজিঃ), (৯) হযরত উম্মে হাবীবা (রাজি), (১০) হযরত সুফিয়া (রাজিঃ), (১১)
হযরত মায়মুনা (রাজিঃ)। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ২৪৮ পৃষ্ঠা। হাদীসঃ- হযরত আবু
হুরায়রা (রাজিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ
মাত্রা সাওয়াব পাওয়ার আশা রাখে সে যেন আহলে বায়াত নবী করীম (সাঃ) এর পরিবার পরিজনের
উপর এই শব্দগুলি দ্বারা দরুদ পড়া কে কর্তব্য মনে করে। এবং জূররিয়্যাতিহী ওয়া আহলে
বাইতিহী শব্দগুলো কাউলুলবাদী ২৮৪ পৃষ্ঠা উল্লেখ রয়েছে। ❇️ ওয়া আওলাদিহী শব্দের
ব্যাখ্যাঃ- ওয়া আওলাদিহী নবী করীম (সাঃ) সন্তান-সন্ততি উপর হে আল্লাহ তোমার রহমত
বৃদ্ধি করে দাও। রাসূল (সাঃ) এর সন্তানগণের নাম -নির্ভরযোগ্য অনুযায়ী তিন সাহেব
জাদা ছিল -(১) হযরত কাসিম(রাজিঃ ), (২) হযরত আব্দুল্লাহ (রাজিঃ),(৩) হযরত ইব্রাহীম
(রাজিঃ) । ইব্রাহীম মারিয়া কিবতিয়ার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৮ মাস বয়সে
ইন্তেকাল করেছেন। হযরত কাসিম ও আব্দুল্লাহ কে তাহের ও তাইয়্যেব নামে ডাকা হত এবং
রাসূল (সাঃ) এর ৪ জন কন্যা সন্তান ছিল -(১) হযরত যয়নব (রাজিঃ), (২) হযরত রুকাইয়া
(রাজিঃ), (৩) হযরত উম্মে কুলসুম (রাজিঃ), (৪) হযরত ফাতেমা (রাজিঃ) এবং
জুরয়িয়্যাতিহী শব্দ দ্বারা নবী করীম (সাঃ) এর আত্মীয় -স্বজনকে বুঝানো হয়েছে। এবং
আসহাবিহী এবং ওয়া আওলিয়াইহী এবং ওয়া উম্মাতিহী আজমাইন। এই শব্দগুলো জারিয়াতুল উসুল
ইলা জনাবি রাসূল (সাঃ) ফযীলত সহ দরুদ ও সালামের কিতাবের ৬২ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
আসহাবিহী ওয়া উম্মাতিহী আজমাইন এ শব্দগুলো ইলাউস সুনানে ১ম খন্ড ১৫ পৃষ্ঠা উল্লেখ
আছে, এবং হযরত হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি এ সমস্ত শব্দ দিয়ে দরুদ শরীফ
পড়তেন। ❇️ কামা সাল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বারাকতা ওয়া রাহিমতা এর অর্থঃ- সেইরুপ
শান্তি, সালামতি বরকত ও রহমত অবর্তীন করুন। এবং এ শব্দগুলো দালায়েলুল খায়রাতের ৯২
নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, এই শব্দগুলি নশরুত তীব কিতাবের ৭৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
এবং কামা সাল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা এ শব্দগুলো সূনানে আবু দাউদ শরীফের ২য় খন্ড ৬০
পৃষ্ঠা উল্লেখ আছে। ✳️ আলা সায়্যিদিনা ইব্রাহীমা ওয়া আলি সায়্যিদিনা ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামিদুল মাজীদ অর্থঃ- যেরুপ তুমি অবতীর্ণ করিয়াছিলে আমাদের অধিনায়ক হজরত
ইব্রাহিম (আঃ) ও তার বংশধরগণের উপর নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও মহান। এই শব্দগুলি
দরুদে ইব্রাহিমে উল্লেখ আছে। (মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ২২০ পৃষ্ঠায় ) 🔴 নবি করীম (সাঃ)
ছাড়া অন্য কারও প্রতি কি সালাত সালাম জায়েয? দরুদ শরীফ পড়ার মূলনীতিঃ- নবী কারীম
ছাড়া অন্য ব্যক্তির উপর দরুদ পড়া জায়েজ আছে, হাদীস- হযরত আবু আওফা (রাজিঃ) বণর্না
করেন, যখন কোন ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর নিকট সাদকা (যাকাতের মাল) নিয়ে আসতেন, তখন
তিনি দুআ করতেন আল্লাহুম্মা সাল্লি আলাইহী,ইয়া আল্লাহ আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ
করুন। এভাবে আমার পিতা একদিন সাদকা নিয়ে তার কাছে এলে তিনি দুআ করলেন ইয়া আল্লাহ
আপনি আবু আওফার পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করূন। ( বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড ৫৭৬
পৃষ্ঠায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তাফসীর ইবনে কাসীর ৫ম খন্ড ৩৫ পৃষ্ঠায় ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) 💠 হাদীস- হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাজিঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস- তিনি
বলেন,একজন মহিলা নবী করীম (সাঃ) কে বললেন, আমার ও আমার স্বামীর জন্য দোয়া করুন তখন
নবী করীম (সাঃ) বললেন, ছাল্লাল্লাহু আলাইকা অ আলা জাওযীকা , অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা
তোমার এবং তোমার স্বামীর উপর রহমত করুক। (সূনানে আবু দাউদ শরীফ ২য় খন্ড কিতাবুস
সালাত ৩৫১ পৃষ্ঠায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সূরা তাওবা-১০৩ )🏰 নবী করীম (সাঃ) সাদকা
গ্রহণ করেন নাই, এবং তার জন্য বিনা পয়সা দু'আ করেছেন, নবী করীম (সাঃ) স্বয়ং আবু
আওফার পরিবারের উপর দরুদ পাঠ করেছেন, উল্লেখিত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল, নবী
নন এমন ব্যক্তি ছাড়া, ব্যক্তির নামেও দরুদ পড়া জায়েয আছে, এবং প্রসিদ্ধ চার তরীকার
প্রবর্তক ব্যক্তির নামে ও দরুদ আছে। হাক্কানী দরুদ শরীফে হযরত মাওলানা সুফী মুফতী
আজানগাছী (রহঃ) এর নাম উল্লেখ নেই যদি উল্লেখ থাকত তাহলেও এই দরুদ পড়া জায়েজ হত,
নাম যেহেতু উল্লেখ নেই তাহলে আর কোন প্রশ্নই নেই অবশ্যই অবশ্যই হাক্কানী দরুদ পড়া
জায়েয। দরুদ অর্থঃ- দু'আ যে দরুদে নবি করীম (সাঃ) এর উপর দরুদ আছে এবং তার নাম
মুহাম্মদ শব্দ উল্লেখ আছে এবং দরুদের শব্দগুলো কোরআন ও হাদীসের সমর্থিত শব্দ, সে
দরুদ পড়া জায়েয আছে। বর্তমান অনেক দরুদ বিভিন্ন মাহফিলে প্রচলন আছে যেমনঃ বালাগাল
উলা বী কামালিহী কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহী হাসুনাত জামিউ খিছালিহী সাল্লু আলাইহী
ওয়া আলেহী। এই দরুদ টির প্রবর্তক আল্লামা শেখ সাদী (রহঃ) এই দরুদটি কোরআন ও হাদীসে
উল্লেখ নেই কিন্তু পড়া জায়েজ আছে, কেননা এই কবিতার মধ্যে নবীজির প্রশংসা এবং দরুদ
আছে। তদ্রূপভাবে আমাদের সমাজের আরেকটি দরুদ প্রচলিত আছে, আল্লাহুমা ছাল্লি আলা
সাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ, ওয়ালাআলী সাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ, এই দরুদ
শরীফের শব্দগুলি হুবুহু কোন হাদীসে নেই, এটাও বানানো দরুদ তবু পড়া জায়েয। কেননা এই
দরুদে নবীজির নাম ও নবীজির উপর দরুদ আছে এবং এই শব্দগুলো হাদীসে উল্লেখ আছে। এমনি
ভাবে অনেক দরুদ শরীফ যে গুলো হুবুহু হাদীসে উল্লেখ নেই কিন্তু দরুদের শব্দগুলো
হাদীসে উল্লেখ আছে এবং শব্দগুলো কোরআন হাদিসের সমর্থিত, উক্ত দুরুদ গুলোও পড়া জায়েয
আছে। যেমনঃ দরুদে তুনাজ্জীনা, দরুদে নারিয়াহ, দরুদে তাজ, দরুদে হাজারী, দরুদে মাগী,
দরুদে যিয়ারত, দরুদে তাসমিয়া, দরুদে শিফা ,দরুদে মাগফিরাত, দরুদে শাফায়াত, ইত্যাদি,
নবীগণ ব্যতীত অন্যদের জন্য সালাত শব্দ দিয়ে দু'আ করতে দোষ নেই, তাফসীরে মাযহারীতে
৬ষ্ঠ খন্ডে ৪০নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। এই ব্যপারে বিশুদ্ধ মত হল এটা নবীর সঙ্গে
মিলিয়ে পড়লে জায়েয, হযরত ইবনে আব্বাস (রাজিঃ) বলেন- দু'আ করার পদ্ধতিতে হলে তাতে
কোন দোষ হবে না। ইবনুল কায়ুম (রহঃ) বলেছেন- নবী, ফেরেস্তা ,নবী করীম (সাঃ) এবং তার
স্ত্রীগণ এবং তার পরিবার বর্গ ও বংশধরগণ ও নেককার আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের জন্য সালাত
ব্যবহার করা যাবে, তাদের জন্য রহমতের বরকতের দু'আ করা যাবে, তাফসীরে মাযহারী ৬ষ্ঠ
খন্ড ৪১ পৃষ্ঠায় সূরা তাওবার ১০৩নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন- হে নবী আপনার সালাত
তাদের জন্য স্থিরতা ও প্রশান্তি।🔴🔴 হাক্কানী দরুদ শরীফের তাৎপর্যঃ- বিভিন্ন দরুদ
শরীফে ফযীলতের কিতাব এবং ইসলামী কিতাবাদীতে প্রায় ৩০০ দরুদ শরীফ উল্লেখ আছে,
হাক্কানী দরুদ শরীফ প্রচলিত সমস্ত দরুদের সার ও চুম্বুক, হাক্কানী দরুদ শরীফ পড়লে
সমস্ত দরুদ শরীফের ফয়েজ ও বরকত পাওয়া যায়। হাক্কানী দরুদ শরীফের শব্দগুলি কোরআন ও
হাদীস শরীফের প্রচলিত শব্দ, এই দরুদ শরীফটি সমস্ত মুসলমানদের জন্য বিশ্বজনীন
প্রার্থনা ও দু'আ। এই দরুদে নবী করীম (সাঃ) থেকে শুরু করে তার সমস্ত বংশধর,
আত্মীয়-স্বজন,সাহাবীগণ বন্ধু-বান্ধবগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল উম্মতের শান্তির
জন্য দু'আ করা হয়েছে, এবং হাক্কানী দরুদে সামগ্রিকতা ও ব্যাপকতা রয়েছে, আহলে বায়েত
এবং সমস্ত মানুষের জন্য প্রার্থনা, হাক্কানী দরুদ শরীফ পাঠ করিলে আল্লাহ তা'আলার
অসিম রহমত, বরকত লাভ হয়, গুনাহ মাফ হয়, বিপদ- আপদ থেকে আল্লাহর রহমতে রক্ষা পাওয়া
যায়, অন্তর পরিস্কার হয়, মারিফাতের গুপ্তভেদ প্রকাশ পায়, স্বপ্নযোগে নবী রাসূল ও
ওলীগণের সাক্ষাত লাভ হয়। হাক্কানী দরুদ শরীফের প্রথম অংশ কালাম পাকের শব্দ,
দ্বিতীয় অংশ হযরত হাসান বসরী (রহঃ) পঠিত অংশ আর তৃতীয় অংশ দরুদে ইব্রাহীমের অংশ।
অতএব , হাক্কানী দরুদ একটি পরিপূর্ণ দরুদ ও প্রার্থনা, হযরত মাওলানা শাহ সুফী মুফতি
আজানগাছী (রহঃ) দীর্ঘ ১৪ বছর শুড়ীর জঙ্গুলে কঠোর সাধনা অবস্থায় হযরত খিজীর (আঃ) এর
সাক্ষাতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর হুকুম অনুযায়ী ইলহামের মাধ্যমে হাক্কানী দরুদ
শরীফ পেয়েছেন, হাক্কানী অর্থ সত্য, আর দরুদ অর্থ দু'আ, হাক্কানী দরুদ অর্থ কোরআন
হাদীস সমর্থিত একটি সত্য সঠিক দু'আ। 🔴 হাদীসঃ- হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাজিঃ) থেকে
হাদীস বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর উপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত দু'আ সমূহ
আসমান ও জমিনের মধ্যে ঝুলে থাকে, কোন দু'আ কবুল হয়না। যতক্ষন পর্যন্ত দু'আর সাথে
দরুদ শরীফ পড়া না হয়। (তিরমিজী শরীফ ১ম খন্ড ১১০ পৃষ্ঠায়, মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ৮৬
পৃষ্ঠায়)। 🔴 হাদীসঃ- হযরত ইবনে আব্বাস (রাজিঃ) হতে বর্ণিত- আল্লাহ তা'আলা হযরত
হাওয়া (আঃ) কে আদম (আঃ) এর বাম পাজার থেকে সৃষ্টি করলেন আর তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন,
আদম (আঃ) যখন হাওয়া (আঃ) এর নিকট গেলেন তখন ফেরছস্তারা মোহরানা আদায় করতে বললেন-
তখন আদম (আঃ) বললেন- তার মোহরানা কি? তখন ফেরেস্তারা বললেন- আপনি হযরত মুহম্মদ
(সাঃ) এর উপর ৩ বার দরুদ শরীফ পাঠ করুন। (বেদায়া ওয়ান নেহায়া ১ম খন্ড ৭৪ পৃষ্ঠায়)
শায়েখে আবু দারামী (রহঃ) বলেন, যখন তুমি আল্লাহর নিকট কোন প্রার্থনা করতে চাও
তৎপূর্বে দরুদ শরীফ পড়ে যা ইচ্ছা দু'আ কর এরপর দরুদ শরীফের মাধ্যমেই দু'আ শেষ করা।
(ফয়জুল কালাম ১৮৭ পৃষ্ঠায়) 🔴 হযরত মাওলানা শাহ সুফী মুফতী আজানগাছী (রহঃ)
প্রতিষ্ঠিত হাক্কানী দরবারে দু'আ ও নামাজের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া হয় এবং দরুদ
শরীফের মাধ্যমেই দু'আ শেষ করা হয় ,যাহা হাদীস সম্মত। হাক্কানী দরুদ শরীফ কোরআন
হাদীসের শব্দ, এই জন্য বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম হাক্কানী দরুদ শরীফ ও হযরত মাওলানা শাহ
সুফী মুফতী আজানগাছী (রহঃ) এর নাম ও জীবনী বিভিন্ন কিতাবাদীতে উল্লেখ করেছেন যথাঃ-
(১)- ইসলামী বিশ্বকোষ ২য় খন্ড ৫৪২ পৃষ্ঠায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ, (২)- প্রতি
সেকেন্ডে মিনিটে লক্ষ কোটি নেকি, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবাইর আহমাদ সাহেব তাবলীগ
জামাতের আমীর, কাকরাইল, ঢাকা, তার লিখিত কিতাব ৩৮ পৃষ্ঠায়, (৩)- মূফতী মুহাম্মদ
মাহযুরা পাকিস্তান আরবী মাদরাসা বোর্ডের লেখক, তার লিখিত রক্তাক্ত ফোরাত তীর ৫২৬
পৃষ্ঠায় (৪)- আলহাজ্ব মাওলানা এম ওবাইদুল হক (রহঃ) ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলাদেশের
পীর আওলীয়াগণ কিতাবের ৮৮ পৃষ্ঠায়, (৫)- আলহাজ্ব মুহাম্মদ বসির উদ্দিন আহমদ বি,এ এর
লিখিত নেক আমল বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায়, (৬)- তাযকিরাতুল আওলীয়া সোলাইমান বুক হাউস ৯৩১
পৃষ্ঠায়, (৭)- মাওলানা মুহীউদ্দীন খান কর্তৃক মাসিক মদীনা পত্রিকা, (৮)- বাংলাদেশের
সূফী সাধক, গোলাম সাকালায়েন রচিত কিতাব ৩২৯ পৃষ্ঠায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন, (৯)-
মাওলানা শামসুল হক (রহঃ) লিখিত ছারছীনা লাইব্রেরী নিয়ামুল কোরআন ২২৬ পৃষ্ঠায়, (১০)-
হাক্কানী আঞ্জুমানের প্রচলিত অজিফা ও উরসেকুলের ফজিলত ও কিছু তথ্য বিবরণী ও জরুরী
মাসায়েল বইয়ের ৯৭নং পৃষ্ঠায়, (১১)- হাক্কানী আঞ্জুমান উরসেকুলের কিতাব ২৬নং
পৃষ্ঠায়, (১২)- হযরত মাওলানা শাহ সুফী মুফতী আজানগাছী (রহঃ) এর পরিচয় বইয়ের ১৪নং
পৃষ্ঠায় ইত্যাদি। 🔴🔴🔴🔴🔴
Comments
Post a Comment